গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি বা ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির বিশেষ দিনগুলোর সমন্বয় আনতে বাংলা একাডেমির বর্ষপঞ্জি সংস্কার কমিটি ২০১৯ সালে সরকারি ক্যালেন্ডার সংস্কার করে। এরপর সংস্কৃত তারিখগুলো উল্লেখ করে সরকারি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। এই বর্ষপঞ্জির সংস্কার ২০১৯ সালের একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিলো।
বাংলা ক্যালেন্ডারের সংস্কার অনুযায়ী ১৪২৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাস হয়েছিল ৩০ দিনে। এরপর থেকে প্রতি অধিবর্ষ বা ইংরেজি লিপইয়ারে মাসটি ৩০ দিনে হিসাব করা হবে। বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস ৩১ দিনে, কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র মাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে।
সংস্কৃত বর্ষপঞ্জির হিসাবে গত বছরের ১৪ মার্চ বাংলা বছরের চৈত্র মাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা ১৫ মার্চ থেকে শুরু হয়। সেই হিসেবে এই বছর ইংরেজি অধিবর্ষের হিসাবে আবারও ফাল্গুন মাস ৩০ দিনে গণনা হয়। কিন্তু আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে আবার তা ২৯ দিনে নেমে আসবে। নতুন সংশোধন অনুযায়ী ইংরেজি পঞ্জিকার হিসাবে যে বছর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের পরিবর্তে ২৯ দিনে হবে, কেবল সে বছরই ফাল্গুন মাসে দিনের সংখ্যা ২৯ থেকে ৩০-এ দাড়াবে। এতে করে ঘুচবে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির দূরত্ব। জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবদীপ্ত দিনগুলো দুটো বর্ষপঞ্জিতেই অভিন্ন থাকবে। যার ফলে এই নিয়ে কোন ধরনের কোন জটিলতা সৃষ্টি হবে না বা কোন অসামঞ্জস্যতার অবকাশ থাকবে না।
ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির তারিখগুলোর সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে সভাপতি করে একটি কমিটি করা হয়। তারপর বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধন করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সরকার পরবর্তীকালে ২০১৯ এ এসে এটি বাস্তবায়ন করে।
২০১৯ সালের ১ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের যে ছুটির তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলা বর্ষপঞ্জির নতুন তারিখগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ৮ ফাল্গুন উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার দাবিতে যেদিন মিছিল হয়েছিল, দিনটি বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে ৮ ফাল্গুন ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বর্ষপঞ্জিতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের সময় সেটি ৯ ফাল্গুনে পড়ে। তেমনি ভাবেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে পয়লা পৌষ ছিল, যা তারপর থেকে ক্যালেন্ডারে ২ পৌষ পরত। এসব অসামঞ্জস্যতা দূর করে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির সঙ্গে বাংলা সনের সমন্বয় করার জন্যই বিজ্ঞানভিত্তিক এই সংস্কার করা প্রয়োজন ছিলো।
এর আগেও বাংলা বর্ষপঞ্জি দুই দফা সংস্কার হয়েছে। প্রথম দফায় ১৯৫০-এর দশকে প্রখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী ড. মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে এই সংস্কার হয়। মেঘনাদ সাহার সুপারিশে বৈশাখ থেকে ভাদ্র ৩১ দিন, আশ্বিন থেকে চৈত্র ৩০ দিন ছিল, অধিবর্ষে এক দিন যুক্ত হতো চৈত্র মাসে। এরপর ‘শহীদুল্লাহ কমিটি’ মেঘনাদ সাহার সুপারিশকে সামনে রেখেই কিছু সংযোজন-বিয়োজনের সুপারিশ করে। কিন্তু ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে বাংলা দিনপঞ্জিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হলে অধিবর্ষ গণনার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়। তখন থেকেই শহীদুল্লাহ কমিটির সুপারিশ সংশোধনের কথা হচ্ছিল।