আলোচিত বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা

২০১৯ সালের একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিলো  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড। সেই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির ২৬ ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েট কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। 

যে ২৬ ছাত্রকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ২৫ জন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের চার্জশীটভুক্ত আসামী। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ সংগঠনটির আরো কিছু সাবেক নেতা-কর্মীও ছিলো। ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশীট তৈরি করে গোয়েন্দা পুলিশ। আলোচিত এই হত্যা মামলার এজাহারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাসহ প্রথমে ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও ঘটনা তদন্তের পরে আসামীর সংখ্যা বেড়ে ২৫ এ দাড়ায়।

আলোচিত এই হত্যাকান্ডটি ঘটে গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৭ই অক্টোবর। সেদিন ভোররাতে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বুয়েটের শেরে বাংলা হল থেকে। এর পরপরই ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের এই প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামে।

মামলার চার্জশীটে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সাথে ১১ জন সরাসরি সম্পৃক্ত এবং বাকিরা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষও সোচ্চার হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

হত্যাকাণ্ডের দিন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবরারের ১০১১ নম্বর রুম থেকে রাত সোয়া আটটার দিকে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগের ছেলেরা। এরপর রাত ৩ টার দিকে জানা যায় আবরার কে হত্যা করে একতলা এবং দোতলার সিঁড়ির মাঝামাঝি ফেলে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে আবরারকে হত্যার পূর্বে দুই-দফা দুটি রুমে নিয়ে গিয়ে তাকে পেটানো হয়েছে। প্রথমে ২০১১ নম্বর রুমে এবং পরে ২০০৫ নম্বর রুমে। এরপর ঘটনা স্থলে বুয়েট মেডিকেলের ডাক্তার এসে আবরারকে দেখে মৃত বলে ঘোষণা করে।

আবরারকে মারার পরে তাকে প্রথমে সিড়ির কাছে ফেলে রাখা হয়। আর সিড়ির কাছের সেই জায়গাটি ঘিরে রাখে ছাত্রলীগের ছেলেরা। সাধারণ ছাত্রদের সেখানে জড়ো হতেও বাধা দিয়েছিল তারা।

এরপর হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভোষ্টকে জানায় এবং তাকে নিয়ে আবরারের ১০১১ নম্বর রুমে যায় এবং সেখানে তারা পুরো ঘটনা সম্পর্কে তাকে অবহিত করে। 

ছাত্রলীগের ছেলেরা খবর পেয়ে সেই রুমের দরজা বাইরে থেকে ধাক্কা দিতে থাকে এবং ভোর ৫টা পর্যন্ত তারা সেখানেই অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের ছেলেরা চলে গেলে রুমের ভিতরে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের সব হলের ছাত্রদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সংগঠিত হতে থাকে।

এরপর ভোর ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ বিষয়ের পরিচালক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে তার কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার তদন্ত দাবি করলে কিন্তু তিনি তেমন সাড়া দেন নি।

বুয়েটে গণ্ডগোল হচ্ছে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল রাত ২টার দিকে সেখানে গেলেও তাদের তখন ভিতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এরপর বুয়েট ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি রাসেল (বর্তমানে বহিষ্কৃত) আবার থানায় ফোন করে এবং জানায় তাদের হলের প্রভোষ্ট এসেছে তাই পুলিশ চাইলে এখন যেতে পারে।

এরপর ৪ টার দিকে আবারো পুলিশ সেখানে যায়। প্রভোষ্ট, ডাক্তার সেখানে সবাই উপস্থিত ছিল। ডাক্তার সেখানে আবরারকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর সেখানকার প্রক্রিয়া শেষ করে মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।

পুলিশের দুই দফা সেখানে যাওয়া এবং তাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেকোন স্থানে ধরনের কোন ক্রাইম ঘটলে সেখানে পুলিশ খবর পাওয়া মাত্র উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটিই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্ত বুয়েটে যখন আবরারকে ছাত্রলীগের ছেলেরা পিটিয়ে মেরে ফেলল তখনো পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ক্ষমতার অপব্যবহারে ছাত্রলীগ যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। যদিও দেশব্যাপী এই ঘটনা আলোড়ণ সৃষ্টি করায় পুলিশ পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়।

You may also like...

Read previous post:
অর্থমন্ত্রীর প্রলাপ শোনা যাচ্ছে, কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী চুপ কেন?

প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ওপর ভ্যাট আরোপের বিরুদ্ধে চলমান ছাত্র আন্দোলন এবং এ নিয়ে নানামুখী বিভ্রান্তির জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল...

Close