সংবিধান অমান্য করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কিছুক্ষণ আগে একটা সংবাদ দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছি। একটি সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বেশি কথা বললে কিন্তু বিদ্যুৎ পাবেন না। আমার কোন কিছু আসে যায় না। আর ভবিষ্যতে কেউ করেও দিবে সেই আশাও করতে পারবেন না। কাজেই সবাইকে অন্ধকারে থাকতে হবে। আরো যদি বলেন, তাহলে যেগুলো পাওয়ার প্লান্ট আছে সবগুলো বন্ধ করে দেই। তাহলে আর কোন অসুবিধা ও দূষণ হবে না। আপনারা হারিকেন বা কুইক বাতি জ্বালিয়ে চলবেন।”
আওয়ামী সমর্থক অনেকেই বলছেন প্রধানমন্ত্রী নাকি অনেকটা মজা করেই এই কথা বলেছেন। কিন্তু এই বক্তব্যের মধ্যে কোন ধরনের হাস্যরস খুঁজে পাইনি। বরং অবাক হয়েছি তাঁর এই ধৃষ্টতা দেখে। এটি বাংলাদেশের তথা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় হুমকি।
১. “বেশি কথা বললে কিন্তু বিদ্যুৎ পাবেন না।” – এই কথাটি জনগণের জন্য একটি মারাত্মক হুমকি। আমি জানিনা বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের হুমকি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন কিনা, সংবিধান ঘেঁটে কোথাও এ বিষয়ে কিছু খুঁজে পাইনি।
২. “…আমার কোন কিছু আসে যায় না।” – এটা কেমন কথা? একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার কিছু আসবে যাবে না কেন? নির্বাচনের আগে তো আমার জনগণ, আমার দায়িত্ব এসব বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন একদম। আর যখন নিজ স্বার্থ চলে আসে তখন আমার কিছু আসে যায় না? আপনার অবশ্যই ‘আসতে যেতে’ বাধ্য। বৈধ অথবা অবৈধ যে প্রক্রিয়ায়ই হোন না কেন, আপনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সেই হিসেবে দেশের প্রত্যেকটি সফলতা এবং ব্যর্থতার দায়ভার আপনার। চেহারা দেখানোর জন্য কেউ প্রধানমন্ত্রীত্ব পায়না। এভাবে হুমকি দিয়ে ভীতিটা আরও কয়েকশ গুন বাড়িয়ে দিলেন, যার অধিকার আপনাকে জনগণ দেয়নি।
৩. “…আর ভবিষ্যতে কেউ করেও দিবে সেই আশাও করতে পারবেন না।” এই কথাটি বলারও কোন অধিকার আপনার নেই। আপনি রাজনীতি ফলিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেন তা তো আমরা সবাই দেখেছি এবং এখন অনেকটা অভ্যস্তও হয়ে গেছি। তবে বাংলাদেশের জনগণ কার ওপর কি আশা করবে তা নিয়ন্ত্রণ বা ম্যানিপুলেট করার এখতিয়ার আপনার নেই। আপনার কাজ হলো জনগণের স্বার্থে কাজ করা, ব্যক্তিস্বার্থে না।  ভুলে যাবেন না, আমরা বীরের জাতি, সকল হুমকি/আক্রমণের তোয়াক্কা না করে নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়ার অধিকার এবং ক্ষমতা দুটিই আমাদের এখনো আছে। ৬৯ এর গণআন্দোলন থেকে শুরু করে ১৩ এর শাহবাগ আন্দোলন- সবই তার উদাহরণ। আমরা চাইলে আবারো জেগে উঠতে পারি।
৪. “…কাজেই সবাইকে অন্ধকারে থাকতে হবে। আরো যদি বলেন, তাহলে যেগুলো পাওয়ার প্লান্ট আছে সবগুলো বন্ধ করে দেই।” এ কেমন হুমকি দিলেন আপনি প্রধানমন্ত্রী সাহেবা? আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে এ ধরনের হুমকি দিতে পারেন না আমাদের। আপনি কেনো আপনার ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন? কেনো দেশের মানুষকে অন্ধকারে রাখার হুমকি দিচ্ছেন?
তাছাড়া আপনার এই বক্তব্য সরাসরি আমাদের বাকস্বাধীনতার ওপর হুমকি। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, দেশের মানুষ তাদের প্রত্যাশা আপনার কাছে ব্যক্ত করার অধিকার রাখে, এবং সেই প্রত্যাশা না রাখতে পারার মতো যদি কোন সঠিক ব্যাখ্যা থাকে, আপনার উচিত তা সুন্দর করে যুক্তিসম্মতভাবে উপস্থাপন করা, এভাবে হুমকি দিয়ে নয়।
জনাবা প্রধানমন্ত্রী, আমাদের বাংলাদেশের ৩৯ ধারায় কি বলা হয়েছে মনে আছেতো আপনার?
বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে, (১) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদান করা হইল।
(২) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত-অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ-সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে
(ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের, এবং
(খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার
নিশ্চয়তা দান করা হইল।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আপনার এই ধরনের হুমকি যুক্ত বক্তব্যে সংবিধানের ৩৯(ক) অমান্য করা হয়। কারন আপনি রামপাল নিয়ে কথা না বলার জন্য হুমকি দিয়েছেন।  যার অধিকার বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার নেই, আপনার কাজ এই সংবিধানের প্রতিটি ধারা রক্ষা করা ও পালন নিশ্চিত করা। এই ক্ষেত্রে কি আপনাকে সংবিধান মান্য করায় ব্যর্থ বলা যেতে পারে? প্রশ্নটা আসলে আপনার কাছেই রাখলাম। নাহলে হয়তো আপনার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বলার কারনে আমাকে আইনী বেড়াজালে ফেলার প্রয়াস করবেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ দফাতে বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে [ এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে]৷”

You may also like...

Read previous post:
প্রধানমন্ত্রীর সংবিধান মান্য করার ব্যর্থতা

আজকের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী, "বেশি কথা বললে কিন্তু বিদ্যুৎ পাবেন না। আমার কোন কিছু আসে যায় না। আর ভবিষ্যতে কেউ...

Close