প্রশ্ন ফাস কেলেংকারী

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতির মেরুদণ্ডের ভিত যত বেশি মজবুত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিক্ষা মানুষের নৈতিক ও আত্মিক শক্তি জোগায়। শিক্ষা মানুষকে নৈতিক, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক হওয়ার শিক্ষা দেয়। মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষিত মানুষই দেশ-জাতির নেতৃত্ব দেয়। অথচ শিক্ষার মতো একটি মৌলিক বিষয় নিশ্চিত করতেই বাংলাদেশ আজ বিপর্যস্ত। প্রশ্নপত্র ফাস, ভর্তিবাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে  এসএসসি-এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন আজ ফাস হয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের জাতীয় জীবনে গভীর অন্ধকার বয়ে আনছে। এটা বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে এক অশানিসংকেত।
বহুদিন ধরে এই প্রশ্ন ফাসের ঘটনা ঘটে আসছে। এই দুস্কর্ম যারা করছে তারা এতদিন টাকার বিনিময়ে মেসেঞ্জার ও হোয়াটস অ্যাপের মতো যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাস করা থাকলেও এখন তা বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপ ও পেইজে, যা হুবহু মিলে যাচ্ছে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে। জাতির জন্য বিরাট এক হুমকি এই প্রশ্নফাসের অপপ্রয়াস। 

এমনও দেখা গেছে যে পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্রের সমাধান করে পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।এই অপসংস্কৃতির শেষ কোথায়? কারা এর নেপথ্য কারিগর? মন্ত্রী-এমপি-দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাই প্রশ্ন ফাস সম্পর্কে অবগত আছেন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী আগে অস্বীকার করে আসছিলেন বিষয়টি। প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কোনো পদক্ষেপই বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি এখনও।
শুধুমাত্র ফেসবুক-টুইটারসহ এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে কিংবা ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে প্রশ্নপত্র ফাস রোধ করা সম্ভব নয়। পরীক্ষায় ২০০ মিটারের মধ্যে মোবাইল ফোন পেলে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশ্ন ফাসে জড়িতদের ধরিয়ে দিলে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শতাধিক মোবাইল নম্বর শনাক্ত করে জড়িতদের ধরার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ অযুত সম্ভাবনার এক সোনালি দেশ। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও উন্নতির স্বর্ণশিখরে উঠতে পারিনি আমরা। এর মূল কারণ আমাদের অপরিকল্পিত শিক্ষা কাঠামো ও শিক্ষাব্যবস্থা। এভাবে প্রশ্নপত্র ফাস হলে আরও কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে না। সমৃদ্ধ দেশ গঠনে প্রয়োজন দক্ষ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও সুশিক্ষিত জনসমষ্টি। এভাবে প্রশ্ন ফাস হতে থাকলে সেই জনসমষ্টি আমরা পাবনা ভেঙে পরবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবকাঠামো। 
শিক্ষকরাই জাতির ভিত তৈরি করেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে তারাই মূল ভূমিকা পালন করেন আবার এই শিক্ষকরাও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন ফাসের জন্য দায়ী। আবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সুনাম ধরে রাখতে প্রশ্ন ফাসে সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে। প্রশ্ন তো শিক্ষকদের কাছেই আসে। তারা আগেভাগে প্রশ্ন খুলে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরাও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সন্তানদের সাহায্য করছে।

You may also like...

Read previous post:
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বাংলাদেশ

২০১৮ সালের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি। সেই সময়ে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ৷ কিন্তু এই...

Close