আপনি আসার ১৩ দিন পর জিয়া মারা গেছেন কেন? হাসিনাকে খালেদার প্রশ্ন । বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ রোববার বিকেলে জয়পুরহাটের রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠের জনসভায় তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। শেখ হাসিনার উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনি আসার ১৩ দিন পর জিয়া মারা গেছেন কেন? আপনি বোরকা পরে বর্ডার পাড়ি দিচ্ছিলেন কেন? তবে কি আপনার মনে কোনো ভয় ছিল?’এর আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। এর ১৩ দিন পর তত্কালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিএনপির নেতারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনার সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন। তবে প্রথমবারের মতো বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখলেন খালেদা জিয়া।
জিয়াউর রহমান দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছেন—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন অভিযোগের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জিয়াউর রহমান লোক পাঠিয়ে তাঁকে (শেখ হাসিনা) দেশে এনেছেন। সব ফিরিয়ে দিয়েছেন।’ বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ‘বাকশাল’ থেকে আবার ‘আওয়ামী লীগ’ নামটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জিয়ার প্রতি দলের নেতা-কর্মীদের কৃতজ্ঞ থাকা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জিয়াউর রহমানকে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আর আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাদের সীমান্ত পাড়ি দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ভয়ে দেশি-বিদেশি কেউ বিনিয়োগ করতে আসে না। বিদ্যুত্, গ্যাস, নিরাপত্তা দিতে না পারায় এ অবস্থা। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় গেলে সব সুবিধা দিয়ে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে।
খালেদা জিয়া জানান, ঈদের পর থেকে আন্দোলন শুরু হবে। বাধা দেওয়া হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। দেশকে রক্ষার জন্য তিনি সংলাপে বসার আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে বেলা দুইটার দিকে জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বগুড়া সার্কিট হাউসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সারা দেশে খুন, হত্যা, গুম আর সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচারের কারণে দেশবাসী আজ অসহায়। অত্যাচার-নির্যাতন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এ সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, জাতিকে মেধাশূন্য করতে সরকার বেছে বেছে মেধাবী যুবসমাজকে গুম-হত্যা করছে। গুম-হত্যায় অতিষ্ঠ হয়ে আজ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, ছাত্র-যুবক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী, শিক্ষক-সাংবাদিক এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি চান। দেশের সব দলকে এক হয়ে আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার আগে বগুড়া সার্কিট হাউসে খালেদা জিয়া গত বছর হরতালের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদলের নেতা ইউসুফ আলীর মা আনোয়ারা বেগমের হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেন।
খালেদা জিয়া গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বগুড়া সার্কিট হাউসে পৌঁছান।উৎসঃ প্রথম আলো